রণে সাজিল রে / তেভাগা কৃষক আন্দোলনের গান / Rone Sajilo Re
'রণে সাজিল রে'- তেভাগার জং গান
২০ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৭ - এই দিনে অবিভক্ত দিনাজপুর জেলায় (এখনকার দ: দিনাজপুর) তেভাগা আন্দোলনে সামিল সংগ্রামী কৃষকেরা মিলিটারীর সংগে এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে লিপ্ত হন। রাতের অন্ধকারে হামলাকারী মিলিটারীর তিনটি ট্রাকের মধ্যে দুটিকে তারা ট্রেঞ্চের মধ্যে উল্টে দেন। মিলিটারীর গুলিতে লড়াকু কৃষকদের নেতা চিয়ার সাই শেখ সহ বাইশজন কৃষক নিহত হন।
জং অর্থ যুদ্ধ, মহরমের সময় সাধারণত গাওয়া হয়। সেই গানের সুরকে ভিত্তি করে ১৯৪৯ মতান্তরে ১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলে খাঁপুরের তে-ভাগা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমরেড্ কালী সরকার, জেলের মধ্যে কমিউনিস্ট বন্দীদের দ্বারা মহান নভেম্বর বিপ্লব পালন উপলক্ষ্যে এই গানটি রচনা করেন। এতে খাঁপুরের তে-ভাগা লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণিত আছে। এই ধরনের গান কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে বিরল।
দুনিয়ার মজদুর এক হও
গান: রণে সাজিল রে
রচনা: কালী সরকার
গায়ক: কাঞ্চন ভট্টাচার্য
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে
একে একে বলে যাই শোনেন বন্ধুগণ
রণে সাজিল রে
খাঁপুর যুদ্ধের কথা করিব বর্ণন
রণে সাজিল রে
১৩৫৩ সনে মাঘ মাসের শেষে
তেভাগার রণে কৃষক উদিল সাহসে
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
ঘুটঘুটি আন্ধার রাতে ম্যাঘের ঝরে পানি
জালিমে এই রাতে বুঝি করিবে দুশমনি
পৃষ্ঠে বাঁন্ধি ধনুক তীর চোঙ লইয়া করে
ভ্যালান্টি পাহাড়া দেয় পাতিরামের মোড়ে
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
এমন সময় দ্যাখো দূরে দেখা যায়
মটোর গাড়ির বাতি মিটিমিটি চায়
মিলিটারির গাড়ি আসে ভ্যালান্টি ভাবিল
হুঁশিয়ার বলে মর্দ চোঙে ফুঁক দিল
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
কতক দূর হইতে গাড়ি কতক দূরে যায়
বড়ো রাস্তা ছাড়ি গাড়ি গাঁয়ের পথে যায়
একধারে উঁচা পাহাড় একধারে বাড়ি
শুনশুনি পথে মটোর যায় গুড়িগুড়ি
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
সৈন্যের গাড়ির পিছে দেখা নাহি যায়
ট্রেঞ্চ খোড়ে কতক বীর গেরিলা কায়দায়
সম্মুখে জনতা দেখি সৈন্যের কাঁপে হিয়া
নিজ নিজ ঘরে সবে যাহারে ফিরিয়া
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
মুখে বলি এই বাত ট্রাক পিছায় ধীরে
গিড়িত করে পড়লো গাড়ি গাঁটার ভিতরে
ফায়ার ফায়ার বলি ক্যাপ্টেন ডুকরিয়া উঠিল
অঙ্গ কাঁপে ঘন মুতে প্যান্ট ভিজে গেল
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
ছুটিল চিয়ারসাই হস্তে মোটা লাঠি
জোয়ান মর্দ বাপের ব্যাটা আটত্রিশ ইঞ্চি ছাতি
দোহাতিয়া বাড়ি মারে সৈন্যের মাথায়
বাপ ডাক ছাড়ি সৈন্য টলে পড়ে যায়
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
দুশমনের গুলি ফের লাগিল কপালে
বেহুঁশ হইল মর্দ রহু ছেড়ে দিলে
চিয়ারসাই গেল দেখে খেপিল সকলে
দিশা নাই হুঁশ নাই মার মার বলে
রণে সাজিল রে
রণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
বন্ধুকের গুলির মুখে টিটিতে না পারে
একে একে বীরগণ ঢোলে ঢোলে পড়ে
তিনখানি ট্রাকের মধ্যে অচল করল দুই
শহীদের রক্তে রঙে হয়ে গেল ভুঁই
রণে সাজিল রেরণ যায় রণডঙ্কা বাজিল রে।
একে একে একুশ বীর জান ছেড়ে দিল
শহীদের রক্তে রাঙা লাল ঝান্ডা হল
যুগ যুগের রুদ্ধ রাগ এই মত করে
ফাটিয়া পড়িল ভাই ঐ না খাঁপুরে।
[আরও পড়ুন: মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়েছিল মোনালিসা, দুই বছর পর ধরা পড়েছিল চোর]
[আরও পড়ুন: ঐ উজ্জ্বল দিন ডাকে স্বপ্ন রঙীন]
[আরও পড়ুন: আহ্বান শোনো আহ্বান]