চতুর্দশপদী কবিতাবলী মাইকেল মধুসূদন দত্ত পিডিএফ ডাউনলোড
Choturdoshpodi Kobitaboli By Madhusudan Dutta PDF download
বইয়ের নাম: চতুর্দশপদী কবিতাবলী
লেখক: মাইকেল মধুসূদন দত্ত
Book: Birangana Kavya
Author: Michael Madhusudan Dutta
বাংলা কবিতাকে যিনি মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তীর্ণ করে দিয়েছিলেন তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। সে কারণেই তাঁকে আধুনিক বাংলা কবিতার জনক বলা হয়। তিনটি প্রায় নতুন কাব্যপ্রকরণ মাইকেল বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করেছিলেন- মহাকাব্য, মনোনাট্য এবং সনেট। মধুসূদনের সাহিত্য চর্চার আটশো বছর আগে বাংলা সাহিত্যে কাহিনী কাব্য থাকলেও তা সুপ্রথিত, ব্যক্তি ও কাল চিহ্নিত বহুমাত্রিক মহাকাব্য ছিল না। মধুসূদনই প্রথম সার্থক মহাকাব্য উপহার দেন বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের। আরো উপহার দেন চতুর্দশপদী কবিতার ঘনসংহতি। অন্য দুটি প্রকরণ যেমন নিঃসঙ্ঘ দ্বীপ হয়ে সাহিত্য সাগরে দাঁড়িয়ে আছে, তাঁর প্রবর্তিত সনেট কিন্তু তা হয়নি বরং প্রবাহমান নদীর মত বহমান। একশো তেঁতাল্লিশ বছর পরও সচল রয়েছে মধুকবি প্রবর্তিত সনেটের পরিচর্চা। ইতালীয় কবি পেত্রার্ক এর অনুকরণে সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা রচনা আরম্ভ করেন মধুসূদন দত্ত। জীবেন্দ্র সিংহের মতে ‘মধুসূদনের এক গভীরতম উপলব্ধির দিনে চতুর্দশপদী কবিতাবলী’র সৃষ্টি।
বিশ্ব সাহিত্যের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় সনেট হলো সেই কবিতা যা কবির হৃদয় উদঘাটনের একটি স্বীকৃত মাধ্যম। জীবনে যে ঢেউ উঠে, মনে যে সুর জাগে সনেটের সীমিত পরিসরে তার নিটোল রূপ রচনা করেন কবি। নতুন করে আত্মউপলদ্ধির পরিচয়, স্বদেশ আবিষ্কারের পদচিহ্ন ছাড়িয়ে আছে চতুর্দশপদী কবিতাবলীতে। কবির মন যে মাতৃভূমি থেকে একদা ছিন্নমূল হয়েছিল, তাকে তিনি শুধু শিল্পের ভিতরে নয়, জীবনের ভেতরে প্রত্যয় রূপে স্বীকার করে নিলেন। তাই কাব্যটিকে আত্মজীবনীমূলক বলা যেতে পারে। পাশ্চাত্য শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এত মাস পরে মধুসূদনকে দেশ চিনিয়েছে, মাতৃভূমিকে ভালবাসতে শিখিয়েছে নতুন করে। স্বীয় অন্তর অনুভবকে নতুন প্রত্যয়ে প্রকাশের জন্য মধুসূদন বেছে নিলেন সনেটের মত শিল্প সংযত কবিতা।
ব্যক্তিগত জীবনের নানা উত্থান-পতন, ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে সনেটের চেয়ে অন্য কোন মহত্ত্বর শিল্প কৌশলে যাওয়া তখন মধুসূদনের পক্ষে প্রায় দুরূহ ব্যাপার ছিল। কবির ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ নিশ্চয়ই মূল্যবান কিন্তু তার চেয়েও মূল্যবান সৃষ্টি সাহিত্যিক মূল্য। সাহিত্যিক মূল্যই সাহিত্য সৃষ্টির চরম মূল্য। সনেটের যে আঙ্গিক তাতে মধুসূদন অত্যন্ত সার্থকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি প্রথম আট পঙ্ক্তিতে দুটোর বেশি মিল দেখাননি যেখানে দেখিয়েছেন (কাশীরামদাস) সেখানে একটু ভিন্নতর পন্থা অবলম্বন প্রবল হয়ে উঠেছে। মদুসূদনের বড় কৃতিত্ব তিনি সনেটের ছাঁচটি ধরতে পেরেছিলেন। চৌদ্দ চরণের আঁটসাঁট শক্ত-সমর্থ কায়ারূপের মধ্যে, নিটোল মুক্তরূপের মধ্যে গভীরভাবের প্রাণটি তুলে ধরার কৌশল আয়ত্ব করতে পেরেছিলেন। যেখানে ভাব তার সহায়, সেখানে (বিজয়াদশমী, সমাপ্তে, কপোতাক্ষনদ, বঙ্গভাষা, সীতাদেবী, ইত্যাদির সনেট) তিনি যথার্থই সার্থক। শোক-দুঃখের তাপে মধুসূদনের মনটা ঠিক সনেট রচনার অনুকূল ছিল না তাই অনেক সনেট শুধু গদ্যাত্মক, কাব্যের ভঙ্গি আছে কিন্তু প্রাণ নেই মড়ার মুখে আল্পনা আঁকার মত কৃত্রিম। আবার অনেক সনেট দাঁড়িয়ে আছে একটু আলঙ্কারিক মারপ্যাঁচের উপর। কাব্যে অলংকার ভালো কিন্তু তার উপর পুরোপুরি নির্ভর করা অনেক ক্ষেত্রেই শোভন হয় না। কবির স্বহস্ত লিখিত ইহার উপক্রমভাগ লিথোগ্রাফে মুদ্রিত হইয়াছে। তদদ্বারা তাঁহার হস্তলিপি দর্শনেচ্ছুগণ পরিতৃপ্ত হইবেন। মিত্রাক্ষর ও অমিত্রাক্ষর উভয়বিধ ছন্দের চতুর্দশ পঙ্ক্তিতে একশতটি পৃথক পৃথক বিষয় ইহাতে বর্ণিত হইয়াছে।
চতুর্দশপদী কবিতাবলী প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট। একই কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবাসী আশ্বস্ত হলেন, এত দিনে মধুকবি সত্যিকার অর্থে বঙ্গভাষা এবং বঙ্গ দেশের মর্যাদা উপলদ্ধি করেছেন, যে ভাষা যে দেশের চেয়ে তার কাছে আরাধ্য ছিল ইউরোপ অথচ সেই ইউরোপে এসেই তার ভাল লাগলো স্বদেশ, স্বদেশের প্রকৃতি, স্বদেশের মানুষ। চতুর্দশপদী কবিতা কবিকে আরেক মাত্রায় উন্নিত করলো গৌড়জনের কাছে। তবে যে আর্তি ছিল, আকুতি ছিল দেশ মাতার কাছে-রেখো মা, দাসেরে মনে তা যেন সত্যিকার অর্থেই গৃহীত হলো ধন্য করলো বাংলার শ্রেষ্ঠ মহাকবি চতুর্দশপদীর লেখক কবি মধুসূদনকে।
Always Free Thinking website-এ upload করা হয় সেই সমস্ত বই যেগুলি আগে থেকেই ইন্টারনেটে উপলব্ধ। Always Free Thinking কোনো বইয়ের PDF তৈরি করে না।